নতুন অধিকার বিপ্লবের পথে মিশর

হাওর বার্তাঃ সম্প্রতি কায়রোতে অনুষ্ঠিতব্য ‘নিপীড়নের সংজ্ঞায়ন ও অপরাধীকরণ’ শীর্ষক নিপীড়নবিরোধী সম্মেলন স্থগিত করেছে জাতিসংঘ। গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেশ হয়নি। সম্মেলনটি না হওয়ার জন্য মিশরের মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে অভিযুক্ত করছে জাতিসংঘ। এদিকে মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সরকারের অভ্যন্তরীণ নিপীড়ন ঢাকতেই জাতিসংঘ এমন সম্মেলন করতে চায় মিশরে। এ ব্যাপারে দেশের সরকারের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে দেশটির ‘হিউম্যান রাইটস স্টাডিজ ইনস্টিটিউট’ এর কর্মকর্তা মুহাম্মাদ জারী বলেন, ‘যে দেশে নিয়মিত নাগরিকদের নিপীড়নের শিকার হতে হয়, সে দেশে নিপীড়নের সংজ্ঞায়নের জন্য কোনো সম্মেলন করাটা রীতিমতো অযৌক্তিক। মানবাধিকারসংক্রান্ত যে কোনো সভা-সম্মেলনের জন্য মিশর উপযোগী জায়গা নয় বলে আমি মনে করি।’
দেশের এ পরিস্থিতিতে অপ্রত্যাশিতভাবে মিশরের সাধারণ জনগণ ও মানবাধিকার কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছে। মোহাম্মেদ আলীর নেতৃত্বে ডাকে বর্তমান প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ সিসির পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন করছে তারা। মিশরের বিভিন্ন শহরে ‘পদত্যাগ চাই’সে   গানে চলছে বিক্ষোভ-আন্দোলন।
এদিকে মিশরের সংবিধান সংশোধনী নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু অর্থনীতির মন্দা কাটাতেই নয়, বরং ২০৩০ সাল পর্যন্ত সিসির ক্ষমতা নিশ্চিত করতেই সংবিধানের এমন সংশোধনী আনা হয়েছিল। এছাড়া গত নির্বাচনে সিসির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় লড়তে চাওয়া জেনারেল সামি আনানকে ১০ বছরের জন্য কারাবন্দি রাখতেও সংবিধানের সংশোধনী আনা হয়েছিল বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ২০১৮ এর নির্বচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণার অভিযোগ রয়েছে সিসির বিরুদ্ধে। পাশাপাশি অজানা কারণে সাবেক রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসির মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে সিসির বিরুদ্ধে। কারাগারে যথাযথ চিকিৎসার অভাব ও অস্বাভাবিক আচরণের কারণেই মুরসির মৃত্যু হয়েছে বলে বলছেন অনেকে।
এত কিছুর পরও এখন পর্যন্ত নিরুদ্বিগ্নভাবে ক্ষমতায় রয়েছেন আবদেল ফাত্তাহ সিসি। ক্ষমতায় আসার পরই সশস্ত্র বাহিনীতে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে নিজের ক্ষমতাকে স্থায়ী করেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাবেক রাষ্ট্রপতি মুরসির শাসনামলে সিসি প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকার ফলে পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কারাবন্দি করতেও সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। মিশরের রাস্তাঘাট গত শুক্রবার পর্যন্ত শান্ত ছিল। শুক্রবার থেকেই মিশরের জনগণ রাস্তায় নেমে পড়ে। এরই মধ্যে তারা বিক্ষোভ করে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে পৌঁছে গেছে। রোববার রাতেও বিক্ষোভ ছিল ক্রমবর্ধমান। এদিকে বিক্ষোভকারীদের প্রতিহত করতে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সরকার। টিয়ারগ্যাস ছোড়াসহ লাঠিচার্জ করছে পুলিশ। দুই শতাধিক প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিসির শাসনামলে মিশরের সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্টের বিশেষ দৃষ্টি পেলেও এখনও তারা সশস্ত্র বাহিনীর নানা কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত থাকার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি।
তবে এইটুকু নিশ্চিত করে বলা যায়, আরবের যে সাংস্কৃতিক, সাহিত্যিক এবং রাজনৈতিক অবকাঠামো তাতে এ অঞ্চলে নিরঙ্কুশ স্বৈরশাসক টিকতে পারবে না। হোসনি মোবারক ও মুয়াম্মার গাদ্দাফির মতো দীর্ঘকাল ধরে ক্ষমতায় থাকা একনায়কদের শোচনীয় পরাজয়ই সেটার প্রমাণ বহন করে।
গত ছয়বছর ধরে মিশরে যেসব পরিবর্তন এসেছে তার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, একজন আদর্শ রাজনীতিকের যেসব গুণাবলি থাকা দরকার সিসির মধ্যে তা নেই। তাছাড়া, কোনো সরকারপ্রধানকে চেনা যায় তার বিরোধী দলের ওপর ভিত্তি করে। অথচ মিশরে সিসির শাসনামলে তাকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিরোধী দলই ছিল না। সিসি ক্ষমতায় এসে এখন পর্যন্ত যা যা করেছেন, তা-ই তার পদত্যাগের জন্য যথেষ্ট।
অন্যদিকে মিশরের কোনো কোনো গণমাধ্যম সিসির পক্ষে জনমত তৈরি করার চেষ্টা করছে। মিশরের এই চলমান পরিস্থিতি যেখানে সাধারণ জনগণ ও মানবাধিকার কর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে, সেখানে গণমাধ্যমের এই আচরণ আন্দোলকে রীতিমতো আরও ত্বরান্বিত করে তুলছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর